Type Here to Get Search Results !

গেমিং ফোন চেনার উপায়

গেমিং ফোন চেনার উপায় 

বর্তমানে মোবাইল গেমিং এর জগতে PUBG ও free fire এমন ভাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে এর জন্য আমাদের শুধু মাত্র স্মার্ট ফোন কিনতে হচ্ছে। এই সকল হাই স্ট্যাটাস অনলাইন গেমের জন্য মোবাইলএ প্রয়োজন একটি হাই এন্ড মোবাইল গেমিং প্রসেসর।
গেমিং ফোন চেনার উপায়
গেমিং ফোন চেনার উপায়
    সাধারণত দুটি মোবাইল প্রসেসর সংস্থা এই ধরনের স্মার্ট ফোনের জন্য প্রসেসর তৈরি করে থাকে। একটি হলো Snapdragon অন্য টি Media Tek । কিন্তু   আমাদের স্মার্ট ফোনে গেম খেলার জন্য কোন প্রসেসর টি ভালো। 

Mediatek vs Snapdragon

গেমিং ফোন চেনার উপায় 

   কোন প্রসেসর আমাদের মোবাইলে থাকলে তা গেম খেলার জন্য সুবিধা হবে। এর উত্তর দেওয়া খুব কঠিন, যদি কেউ এক কথায় এর উত্তর দিয়ে একমাত্র একটি কে বলে দেয় যে এটা ভালো, তো আমি বলবো, কখনো হতে পারে না ।
    কারণ একটি প্রসেসর ভালো হয় অনেক বিষয়ের উপর নির্ভর করে, আর এই সকল বিষয় গুলি কোন প্রসেসর এর উপর কেমন ভাবে যুক্ত করা আছে তা না জেনে কখনোই বলা উচিত নয় যে Snapdragon বা media Tek ভালো। 

    মোবাইলে একটি গেম যত স্মুথ ভাবে চলবে চলবে তাকেই আমরা ভালো মোবাইল বা ভালো প্রসেসর বলে থাকি। কিন্তু একটি প্রসেসর যে সকল পার্ট দিয়ে গড়ে ওঠে, সেই সকল পার্ট যদি উন্নত মনের হয় তবে সেই প্রসেসর টিও খুব ভালো মানের হতে পারে।

গেমিং ফোন চেনার উপায়

   এই দুটি মোবাইল প্রসেসর ছাড়াও আরো কয়েক প্রকার মোবাইল প্রসেসর আছে, যেমন - kirin, স্যামসাং এর Exynos ইত্যাদি। কিন্তু আমাদের দেশে সব থেকে বেশি পরিমাণে এই দুটি ( Snapdragon and Media Tek) প্রসেসরযুক্ত মোবাইল ফোন দেখতে পাওয়া যায়।
    স্যামসাংয়ের বেশিরভাগ ফোনগুলি তারা নিজস্ব প্রসেসর Exynos এর উপর নির্ভর করে তৈরি করে। যদিও আমার ব্যক্তিগত মতামত স্যামসাংয়ের নিজস্ব এই প্রসেসরটি খুব বেশি উন্নত মানের নয়।মিডিয়াটেক ও স্নাপড্রাগণ এই দুটি মোবাইল প্রসেসর এর মধ্যে প্রায় 90% মোবাইলে স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর ব্যবহার করা হয়।

গেমিং ফোন চেনার উপায় 

  এই দুটি প্রসেসর এর মধ্যে স্নাপড্রাগণ অনেক আগে থেকেই এগিয়ে আছে কিন্তু বর্তমানে মিডিয়াটেক 2018 সাল থেকে ধীরে ধীরে তাদের ফ্লাগশিপ প্রসেসরগুলো রিলিজ করার পর থেকে তারাও অনেকটা এগিয়ে এসেছে।
এবার এই স্নাপড্রাগণ ও মিডিয়াটেক কোম্পানির প্রসেসর সম্পর্কে পরপর আলোচনা করে আমি বর্তমানে দুটি ফ্লাগশিপ প্রসেসর নিয়ে আলোচনা করে দেখাবো যে কোন কোম্পানির প্রসেসরটি মোবাইল গেমিং অর্থাৎ পাবজি ফ্রী ফায়ার এর জন্য ভালো হবে।

আপনি এই দুটি প্রসেসর এর সম্পর্কে যদি জানেন তবে পেজটি স্ক্রল করে নিচের দিকে গিয়ে এই দুটি প্রসেসর এর তুলনা দেখতে পারেন এবং আশা করি বুঝতে পারবেন যে কোন প্রসেসরটি মোবাইল গেমিং এর জন্য ভালো।

গেমিং ফোন চেনার উপায় 

Qualcomm Snapdragon প্রসেসর

     কুয়ালকম সংস্থা তাদের প্রসেসর এর নাম দিয়েছিল স্নাপড্রাগণ। আসলে স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর গুলো কুয়ালকম নাম নিয়ে বাজারে প্রকাশ পেয়েছে। কুয়ালা কম মোবাইল প্রসেসর সংস্থা হিসেবে অনেক পুরানো।

    স্নাপড্রাগণ হলো একটি আমেরিকান কোম্পানির দ্বারা নির্মিত মোবাইল প্রসেসর এবং কোম্পানি হলো কুয়ালা কম। এবার আমরা জানবো স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর সম্পর্কে।
গেমিং ফোন চেনার উপায়
গেমিং ফোন চেনার উপায়
   স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর দ্বারা নির্মিত মোবাইল গুলি একটু বেশি দামের হয়ে থাকে কারণ স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর গুলি নির্মাণের দিক থেকে অনেকটা high-end বলে গণ্য করা হয় এবং এদের দামটা অন্যান্য প্রসেসর থেকে বেশি।

গেমিং ফোন চেনার উপায় 

    অনান্য প্রসেসর থেকে এর দাম বেশি হওয়ার অনেক কারণ আছে কিন্তু এই দাম বেশি হওয়ার জন্য এই প্রসেসর দিয়ে নির্মিত মোবাইল গুলির দামও স্বাভাবিকভাবেই অন্য মোবাইল থেকে বেশি হয়।

    স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর এর দাম বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ হলো যে এই সংস্থা শুধুমাত্র একটি সিপিইউ তৈরি করে না এর মধ্যে আরও অনেক পাট থাকে যা CPU আরো ভাবে ব্যবহার হতে সাহায্য করে এই কারণে স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর গুলির দাম মিডিয়াটেক প্রসেসর থেকে বেশি হয়।

    স্নাপড্রাগণ কে আমরা আর একটা বিশেষ নামে চিনি তা হল - Socs স্নাপড্রাগণ এর এই নামটির অর্থ হল যে একটি চিপস বা প্রসেসর এর মধ্যে সমস্ত কিছু এমনভাবে ইনক্লুড করা থাকবে যাতে মোবাইলটি স্মুথ চলতে কোন রকম সমস্যার সম্মুখীন হবে না।

    সাধারণত স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর গুলি উন্নত প্রযুক্তির (10nm বা 8nm) ব্যবহার করে গড়ে তোলা হয় যার কারণে এই সকল মোবাইলে ব্যাটারি লাইফ অনেক দীর্ঘ সময় ধরে চলে।

গেমিং ফোন চেনার উপায়

    স্নাপড্রাগণ তাদের প্রসেসর গুলিকে বা মোবাইল গুলোকে আরো স্মুথ ভাবে একটি গ্রাফিক্স দেওয়ার জন্য নিজস্ব জিপিইউ ব্যবহার করে। স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর এর নিজস্ব অ্যাড্রিনো / Adreno হলো অন্যতম উল্লেখযোগ্য জিপিইউ।

    এই ধরনের বেঞ্চমার্ক এর উপর স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর গুলি গড়ে ওঠে বলে তা খুব ভাবে মোবাইলের সঙ্গে চলতে পারে এবং তার গ্রাফিক্স কোয়ালিটিও মিডিয়াটেক বা অন্য সকল প্রসেসর এর থেকে উন্নত মানের হয়। অ্যাড্রিনো স্নাপড্রাগণ এর নিজস্ব একটি জিপিইউ পদ্ধতি। 

    স্ন্যাপড্রাগন এর প্রসেসর এর মধ্যে আমরা আরও কিছু বিষয় পেয়ে যায় যেমন ইমেজ প্রসেসর, মিডিয়া প্রসেসর, ডিজিটাল সিগন্যাল প্রসেসর, এছাড়াও আছে রেডিও ওয়াই-ফাই মডেল এগুলি সবই এই প্রসেসরে ইনক্লুড করে দেওয়া হয়।

গেমিং ফোন চেনার উপায়

    স্ন্যাপড্রাগন এর প্রসেসর গুলিতে ব্যাটারি অপটিমাইজেশন বিষয়টি খুব ভালোভাবে যুক্ত করা থাকে যা ব্যাটারিকে দীর্ঘক্ষন চলতেও মোবাইলকে হিট কমাতে কাজে লাগে।অর্থাৎ নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার করার ফলে দীর্ঘক্ষন ব্যাটারি লাইফ মোবাইল হিটিং সমস্যা হয় না।
    স্ন্যাপড্রাগন এর এই নিজস্ব বেঞ্চমার্ক গুলো থাকা সত্ত্বেও এমন অনেক স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর আছে যেগুলি ব্যাটারি লাইফ বা হিটিং সমস্যাকে এড়িয়ে যেতে পারেনি।যেমন স্ন্যাপড্রাগন 810 প্রসেসর টি সেটিতে হিটিং প্রবলেম এর কথা দেখা গেছে।

    স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর CPU এবং জিপিইউ কে একটা ব্যালেন্স করে তৈরি করা হয়েছে যার মাধ্যমে এই দুটির একটি মিলিত বেঞ্চমার্ক এর ফলে স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর টি খুব ড্রূত চলতে পারে।
শুধু এই উপরের আলোচনা থেকে এটা মনে করা ঠিক হবে না যে তাহলে স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর গুলি ভালো। স্ন্যাপড্রাগন এর এমন অনেক প্রসেসর আছে যেগুলি মিডিয়াটেক প্রসেসর এর কাছে হেরে যেতে পারে।এরপর আমি মিডিয়াটেক প্রসেসর সম্পর্কে বলার পরে দুটি ফ্লাগশিপ এই দুই কোম্পানির প্রসেসর নিয়ে ব্যালেন্স করে দেখাবো যে কোন প্রসেসর মোবাইল গেমিং এর জন্য ভালো হবে।

গেমিং ফোন চেনার উপায় 

Media Tek প্রসেসর 

 মিডিয়াটেক এর প্রসেসর হলো তাইওয়ানের একটি কোম্পানির, অর্থাৎ মিডিয়াটেক হলো মেড ইন তাইওয়ান। কিন্তু কথা হলো এই মিডিয়াটেক প্রসেসর গুলি কেমন হয়ে থাকে।
    মিডিয়াটেকের প্রসেসরে সাধারণত আমরা অনেক ধরনের কোর /core দেখতে পারি এবং এখানে অনেক বেশি সংখ্যার কোর দেখা যায়। যেমন ডেকা কোর, হেক্সা কোর, অর্থাৎ এদের কোরের ভেরিয়েন্ট গুলি সাধারন থেকে অন্য রকম।
গেমিং ফোন চেনার উপায়
গেমিং ফোন চেনার উপায়
    মিডিয়াটেক প্রসেসর গুলি সাধারণত একটু কম দামি মোবাইলের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ mid-range বা লোয়ার মিড রেঞ্জ বলতে আমরা যে ফোন গুলিকে বুঝিয়ে থাকি সেই সকল ফোনে মিডিয়াটেক প্রসেসর ব্যবহার হয়ে থাকে।

   এর কারণ হলো মিডিয়াটেক প্রসেসর গুলির দাম তুলনায় অনেক কম এই কারণে ফোন নির্মাণ সংস্থা গুলি যখন মিডিয়াটেক প্রসেসর দিয়ে কোন ফোন তৈরি করে তখন স্বাভাবিকভাবেই তার দাম কম হয়। কিন্তু কখনোই এ কথা বলা উচিত হবে না যে বাজারে শুধুমাত্র মিডিয়াটেক প্রসেসর যুক্ত মোবাইলের দাম কম।

গেমিং ফোন চেনার উপায়

    মিডিয়াটেক প্রসেসর গুলো যে সকল মোবাইলে ব্যবহার করা হয় সেই সমস্ত মোবাইলে ব্যাটারি লাইফ টি একটু কম থাকে। কারণ এই প্রসেসর ব্যাটারিকে একটু বেশি পরিমাণে ড্রেন করে ফেলে।

    মোবাইলের ব্যাটারি লাইফ বিষয়টি প্রসেসর এর উপর নির্ভর করে, আর অধিকাংশ মিডিয়াটেক প্রসেসর গুলি একটু পুরানো প্রযুক্তি যুক্ত চিপস ব্যবহার করে ( 12nm বা 14 nm ) আর এর কারণে ব্যাটারি লাইফ বেশি সময় থাকেনা।
    যদিও বর্তমানে তারা নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনেক ফ্ল্যাগশিপ প্রসেসর বাজারে নিয়ে এসেছে যেগুলি উন্নত মানের চিপস বা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি করা। সুতরাং সেগুলি যথেষ্ট পরিমাণে ব্যাটারি লাইফ কে বাড়িয়ে দেয়।
     এবার বলি পারফরম্যান্স এর ক্ষেত্রে মিডিয়াটেক থেকেও যথেষ্ট ভালো মানের পারফরম্যান্স পাওয়া যেতে পারে। যেহেতু এই সকল mid-range যুক্ত মোবাইলে মিডিয়াটেক প্রসেসর ব্যবহারের ফলে অনেক কম দামে পাওয়া যায়, তবুও এখানে কোর সংখ্যা একটু বেশি থাকায় তা ব্যবহার করতে খুব বেশি অসুবিধা হয় না। 

গেমিং ফোন চেনার উপায়

    কিন্তু কোন মোবাইল বা প্রসেসর এর ক্ষেত্রে কোর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ram-এর পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন। তা না হলে কোর বেশি থাকা সত্বেও RAM কম থাকলে প্রসেসর সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। 
    মিডিয়াটেক প্রসেসর এর ক্ষেত্রে সাধারণত মালি / MALI এর জিপিইউ ব্যবহার করা হয়। যা সাধারণত অনেক নিম্নমানের বলে মনে করা হয়। এর ফলে এর গ্রাফিক্স ততো ভালো ভাবে মোবাইলে পারফর্ম করতে পারেনা।
    মিডিয়াটেক প্রসেসর এই গ্রাফিক্স এর জন্য ব্যবহার করা জিপিইউ তারা থার্ড পার্টির কাছ থেকে কিনে ব্যবহার করে। এই কারণে এদের জিপিইউ বা গ্রাফিক্স ডিজাইন খুব বেশি ভালো হয় না। বলা যেতে পারে মিডিয়াটেক প্রসেসর যুক্ত মিড রেঞ্জের মোবাইলগুলোতে ডিসপ্লে কোয়ালিটি খুব বেশি ভালো হতে পারে না।

গেমিং ফোন চেনার উপায়

    যেহেতু এই মালি জিপিইউ মিডিয়াটেক এর নিজস্ব নয় তাই এদের সিপিইউ এবং এই জিপিইউ এর মধ্যে বেঞ্চমারকিং টা খুব বেশি ভালো নয়। এই কারণে মিডিয়াটেক প্রসেসর এর গ্রাফিক্স খুব বেশি ভালো হওয়া সম্ভব নয়। 
    নতুন মোবাইলের ব্যবহারের কিছুদিন পরে এই কারণে মিডিয়াটেক যুক্ত মোবাইল গুলি তার পারফরম্যান্স কে হারিয়ে ফেলে। মিডিয়াটেক প্রসেসর গুলিতে যখন কোন কিছু প্রসেস করার চাপ বেশি হয় তখন এর চিপস একটু পুরানো প্রযুক্তির হওয়ার জন্য বেশি পরিমাণ পাওয়ার নষ্ট করে ও মোবাইল ধীরে ধীরে গরম হতে শুরু হয়।
উপরে মিডিয়াটেক প্রসেসর সম্পর্কে যতগুলি কথা আমি বর্ণনা করলাম এগুলো পড়েই যদি আপনি মনে করেন যে মিডিয়াটেক খারাপ তবে ভুল ভাবছেন এরপর আমি দুটোকে একটি ফ্লাগশিপ প্রসেসর এর সঙ্গে তুলনা করে বুঝিয়ে দেবো কোনটি ভালো এবং খারাপ।

 PUB-G বা FREE FIRE গেমের জন্য Media Tek না Snapdragon যুক্ত ফোন ভালো

    উপরে পরপর দুটি প্রসেসর এর অর্থাৎ মিডিয়াটেক ও স্নাপড্রাগণ সম্পর্কে জানার পর এবার আমি এখানে বর্তমানে ব্যবহৃত দুটি উন্নত মানের প্রসেসর মিডিয়াটেক হেলিও G70 ও স্নাপড্রাগণ 665 এই দুটির মধ্যে তুলনা করে দেখব কোনটি বা কোন কোম্পানি গেমিং এর জন্য সুবিধাজনক।
গেমিং ফোন চেনার উপায়
গেমিং ফোন চেনার উপায়

    একটি মোবাইলের মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো প্রসেসর। এই প্রসেসর সম্পর্কে জেনে একটি মোবাইল কেনা অবশ্যই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপনি যদি এই প্রসেসর এর বিষয়টি না জেনে একটি মোবাইল কিনে ফেলেন তবে হয়তো পরে ঠকে যেতে পারেন।

গেমিং ফোন চেনার উপায়

    বর্তমানে 10000 টাকার মধ্যে এন্ড্রয়েড স্মার্ট ফোনের জন্য সবচেয়ে ব্যবহৃত দুটি প্রসেসর হলো মিডিয়াটেক হেলিও G70 ও স্নাপড্রাগণ 665। কিন্তু এই দুটি প্রসেসর এর মধ্যে মোবাইল গেমিং এর জন্য প্রতিযোগিতা খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ স্নাপড্রাগণ 665 বা মিডিয়াটেক হেলিও G 70 নেওয়া উচিত।

     এই দুটি মোবাইল প্রসেসর এর মধ্যে কোনটি বেটার বা ভালো তা আমরা কম্পেয়ার করে দেখব -

ডিসপ্লে / Display : 

     এই দুটি প্রসেসর এর মধ্যে এখানে মিডিয়াটেক হেলিও G 70 তে ডিসপ্লের ক্ষেত্রে ফুল এইচডি প্লাস / Full HD+ ডিসপ্লে দেখতে পাবো। অন্যদিকে স্নাপড্রাগণ 665 এর ক্ষেত্রেও আমরা ফুল এইচডি প্লাস ডিসপ্লে দেখতে পাই। এবং দুটির ডিসপ্লের ক্ষেত্রে ডিসপ্লে রেজুলেশন একই ২৫২০×১০৮০ ।
গেমিং ফোন চেনার উপায়
গেমিং ফোন চেনার উপায়

তো এখানে আমরা দেখলাম যে এই দুটি প্রসেসরে ডিসপ্লে কোয়ালিটির ক্ষেত্রে একই গুরুত্ব রাখে। অর্থাৎ এই ডিসপ্লে রেজুলেশন মোবাইল গেমিং এর ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবার কথা নয়। সুতরাং এখানে এই দুটি প্রসেসর সমান সমান পারদর্শিতা দেখাতে পেরেছে।

ক্যামেরা / Camera :

     যদিও গেমিং মোবাইল এর ক্ষেত্রে ক্যামেরা খুব বেশি গুরুত্ব রাখে না তবুও 10000 টাকার মধ্যে পাওয়া এই দুটি মোবাইল গেমিং প্রসেসর এর মধ্যে পার্থক্য বোঝানোর জন্য এটি সম্পর্কে আলোচনা করলাম।
     এখানে মিডিয়াটেক হেলিও G70 এর ক্ষেত্রে ডুয়াল ক্যামেরা যা সর্বোচ্চ 16-megapixel + 16-megapixel সাপোর্ট করতে পারে। অন্যদিকে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন 625 এর ক্ষেত্রে একই রকম 16 +16 মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা সাপোর্টে সক্ষম।
গেমিং ফোন চেনার উপায়
গেমিং ফোন চেনার উপায়

    যদি সিঙ্গেল ক্যামেরা ব্যবহার করা হয় তবে মিডিয়াটেক প্রসেসর এর ক্ষেত্রে তার সর্বোচ্চ 48 মেগাপিক্সেলের পর্যন্ত হতে পারে।আবার স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর ক্ষেত্রেও একই রকম একটি ক্যামেরার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ 48 মেগাপিক্সেলের পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।

    অর্থাৎ এক্ষেত্রেও এই দুটি প্রসেসর তারা সমান পারদর্শী তার দাবি রাখে।

ভিডিও / Video :

     মিডিয়াটেক ও স্ন্যাপড্রাগন এর এই দুটি প্রসেসর এর ক্ষেত্রে ভিডিও এর কথা বললে মিডিয়াটেক প্রসেসর টির ক্ষেত্রে 2k @30 fps এবং 1080p @60 fps চলতে সক্ষম। কিন্তু স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর এর ক্ষেত্রে ভিডিও সর্বোচ্চ 4k @30 fps , 1080p @30fps চলতে সক্ষম।
    অর্থাৎ ভিডিওটির ক্ষেত্রে স্ন্যাপড্রাগন এর প্রসেসর টি কিছু শতাংশ আগে বেরিয়ে গেল মিডিয়াটেক হেলিও জি 70 প্রসেসর জায়গা থেকে। কারণ স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর এর ক্ষেত্রে 4k পর্যন্ত সাপোর্ট মিলে যায়। যদিও এটি খুব বেশি পার্থক্য রাখে না গেমিং এর জন্য :)

মেমোরি / Memory :

     মেমোরি সাপোর্ট এর ক্ষেত্রে এই দুটি প্রসেসর এর পার্থক্য মোবাইল গেমিং এর জন্য যথেষ্ট গুরুত্ব রাখে। কারণ RAM যত বেশি ব্যবহার করা হবে মোবাইলের পারফর্মেন্স গেমিং এর জন্য তত ভালো হবে।

    মিডিয়াটেক হেলিও প্রসেসর টির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ 8 গিগাবাইট ( LPDDR4x) পর্যন্ত সাপোর্ট করতে পারে। অন্যদিকে স্নাপড্রাগণ 665 প্রসেসরটি ক্ষেত্রেও একই রকম সর্বোচ্চ সাপোর্ট নিতে পারে। 
গেমিং ফোন চেনার উপায়
গেমিং ফোন চেনার উপায়

    সুতরাং এখানে বলা যেতে পারে এই দুটি প্রসেসর এর ক্ষেত্রে পাবজি ফ্রী ফায়ার এর মত অনলাইন মোবাইল গেম গুলি খুব সহজেই চলবে। অর্থাৎ এই দুটি প্রসেসর অনলাইন গেমিং এর জন্য বা মোবাইল গেমিং এর জন্য উপযুক্ত।

    তাহলে একটা বিষয় বোঝা গেল যে শুধুমাত্র মিডিয়াটেক বা স্নাপড্রাগণ হলেই যে ভালোভাবে চলবে তা নয় আসল বিষয়টি হলো এদের সাপোর্ট ক্ষমতা এবং টেকনোলজি। 

আর্কিটেকচার / Architecture :

     যেকোনো সিপিইউ প্রসেসর গঠন হয় যার উপর ভিত্তি করে তা হল আর্কিটেকচার। প্রসেসর এর এই প্রযুক্তি প্রসেসরকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এমনকি কোনো প্রসেসরকে এফিশিয়েন্সি করে তুলতেও আর্কিটেকচার সাহায্য করে থাকে।
    মোবাইল গেমিং হোক বা যেকোন বিষয় হোক না কেন প্রসেসর তখনই ভালো হয়ে গড়ে ওঠে যখন তার আর্কিটেকচার পদ্ধতি উন্নত মানের হয়। মনে রাখা দরকার এই সকল মোবাইল প্রসেসর সংস্থাগুলি আর্কিটেকচারের দিক থেকে অন্যের উপর নির্ভরশীল।
গেমিং ফোন চেনার উপায়
গেমিং ফোন চেনার উপায়

    কিছু কিছু কোম্পানি যারা এই সকল প্রসেসর এর জন্য আর্কিটেকচার তৈরি করে আর এই সকল প্রসেসর কোম্পানি আর্কিটেকচার কে কিনে নিয়ে তাদের উপর ভিত্তি করে প্রসেসর তৈরি করে।
    আর্কিটেকচার হলো গঠন প্রণালী।অর্থাৎ একটি প্রসেসর কিভাবে গঠন করা হবে বা তাতে কি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে তার সকল কিছু নির্ভর করে এই আর্কিটেকচার এর উপর।
   আর্কিটেকচার এর ক্ষেত্রে হেলিও G 70 64-bit যুক্ত, আট টি কোর দ্বারা গঠিত, এখানে 12nm এর প্রযুক্তি ব্যাবহার করা হয়েছে। স্পিড এর ক্ষেত্রে 2x cortex A75 প্রযুক্তির উপর গড়ে উঠেছে যা সর্বোচ্চ 2.0 Ghz পর্যন্ত স্পিড দিতে সক্ষম। আবার 6x Cortex A55 প্রযুক্তির উপর গড়ে উঠেছে যা সর্বোচ্চ 1. 7 Ghz স্পিড পর্যন্ত চলতে সক্ষম।
     অন্যদিকে স্ন্যাপড্রাগন এর আর্কিটেকচার এর ক্ষেত্রে - 64 বিট আট /৮ টি কোর ও 11nm এর প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে। স্পিড এর ক্ষেত্রে 4x cortex A73 আর্কিটেকচার এর উপর গড়ে উঠেছে যা সর্বোচ্চ 2.0 GHz স্পিড দিতে সক্ষম। আবার 4x cortex A53 প্রযুক্তিটি সর্বোচ্চ 1.8 GHz ক্লক স্পিড এ চলতে সক্ষম।
    এখানে স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর টি সামান্য পাওয়ার কম দিতে সক্ষম কিন্তু দুটি প্রসেসরের দিক থেকে প্রায় সমান তেমন কোন পার্থক্য এদের মধ্যে নেই বললেই চলে। ব্যাটারি লাইফ এর ক্ষেত্রে স্ন্যাপড্রাগন এর প্রসেসর টি 2 পারসেন্ট এগিয়ে থাকতে পারে। সুতরাং মোবাইল গেমিং এর ক্ষেত্রে দুটি প্রসেসরে একই প্রকার ভাবে আনন্দ দেবে।

জি পি ইউ / GPU : 

    আমার মত অনুযায়ী কোন মোবাইল বা কম্পিউটারের ক্ষেত্রে গেম চালানোর জন্য সিপিইউ এর পাশাপাশি সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিটি হলো জিপিইউ। যে প্রসেসর জিপিইউ যত ভালো, মানে হয় সেই প্রসেসরটি তে তত ভালোভাবে গেম প্লে করা যায়। জিপিইউ উন্নত মানের হলে তাতে হাশিং পাওয়ার বেশি থাকে যার ফলে গ্রাফিক্স ও মোবাইল গেম খুব ভালোভাবে চলতে পারে।
গেমিং ফোন চেনার উপায়
গেমিং ফোন চেনার উপায়
    জিপিইউ এর ক্ষেত্রে মিডিয়াটেক প্রসেসর টি Arm Mali-G52 MC2 @820 MHz দিয়ে গঠন করা হয়েছে। অন্যদিকে স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর এর ক্ষেত্রে Adreno 610 @600 MHz জিপিইউ ব্যবহার করা হয়েছে।
    জিপিইউ এর ক্ষেত্রে বলবো যে দুটি প্রসেসর উন্নত মানের প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। সামান্য কিছু পার্থক্য থাকলেও তা পাবজি বা ফ্রি ফায়ার এর মত মোবাইল গেমে কোনরকম সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
   কিন্তু মিডিয়াটেক g70 প্রসেসরটি ক্ষেত্রে একটি প্লাস পয়েন্ট হল এটি একটি গেমিং প্রসেসর সুতরাং এটিতে খুব ভালোভাবে এই সকল মোবাইল গেম খেলা যাবে। 

গেমিং ফোন চেনার উপায়

    অর্থাৎ বুঝতে পারলেন যে স্ন্যাপড্রাগন সবসময়ই এগিয়ে থাকবে এটা কোন বিষয় নয় আসল বিষয়টি হল কোন প্রসেসর এর গঠনের বিষয়টি। যে প্রসেসর যেমনভাবে এবং কি কি পাট দিয়ে তৈরি করা আছে তার উপর ভিত্তি করে তার পারফরম্যান্স নির্ভর করে।

    এখানে এই দুটি প্রসেসর সমান দামের হলেও মিডিয়াটেক এর প্রসেসর টি মোবাইল গেমিং এর দিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে তৈরি করা সুতরাং মোবাইল গেমিং এর জন্য মিডিয়াটেক প্রসেসর টি ভালো।

বেঞ্চমার্ক / Benchmark 

     এবার দেখে নেওয়া যাক এই মিডিয়াটেক ও স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর দুটির বেঞ্চমার্ক কেমন। বেঞ্চমার্ক এর ক্ষেত্রে মিডিয়াটেক এর প্রসেসর টি ১৯৩৭৫১ স্কোর করতে সক্ষম অন্যদিকে স্ন্যাপড্রাগন এর প্রসেসর টি ১৬২৪০৬ স্কোর করতে সক্ষম।
গেমিং ফোন চেনার উপায়
গেমিং ফোন চেনার উপায়
   সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে এই প্রসেসর দুটির মধ্যে বেঞ্চমার্ক গত দিক থেকে মিডিয়াটেক এর প্রসেসর টি প্রায় 30 হাজারের মতো পার্থক্য রেখে স্কোর করছে। আবার বেঞ্চমার্ক এর ক্ষেত্রে জিপি ইউ টি ও স্ন্যাপড্রাগন থেকে মিডিয়াটেক অনেক এগিয়ে আছে।

   মিডিয়াটেক হেলিও g70 প্রসেসরটি অত্যন্ত উন্নত মানের গেমিং এর জন্য তৈরি করা হয়েছে যা খুব সহজেই স্নাপড্রাগণ 665 এর সমতুল্য এমনকি কোথাও কোথাও এর থেকেও বেশি পারফরম্যান্স দিতে সক্ষম।

আমার মতামত :

 এটা সত্যি যে মোবাইল প্রসেসর এর জগতে মিডিয়াটেক অনেক পরে এসেছে এমনকি স্নাপড্রাগণ এর থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। কিন্তু এই কোম্পানি বা এই মোবাইল প্রসেসরটি যে খারাপ সে কথা কখনোই বলা যাবেনা।

   উপরের এই প্রসেসর দুটির কম্পিটিশন থেকে আমরা নিশ্চয়ই এটুকু বুঝতে পেরেছি যে একটি মোবাইল গেমিং এর জন্য কেনার সময় কোন কোন বিষয় গুলি কে গুরুত্ব দিয়ে তা দেখে কিনতে হবে।

গেমিং ফোন চেনার উপায়

    যদি মোবাইল গেমিং এর জন্য কেনার প্রয়োজন হয় তবে তা অবশ্যই জিপিইউ রেম এবং সিপিইউ এর বেঞ্চমার্ক দেখে বা অন্য কোন প্রসেসর এর সঙ্গে তুলনা করে তবেই সিলেক্ট করতে হবে।
    মোবাইল গেমিং এর জন্য কোন কোম্পানির প্রসেসর ভালো হবে এর উত্তর আশা করি আর কাউকে জিজ্ঞাসা করা প্রয়োজন হবে না। কারণ এই পার্থক্য বা তুলনা থেকে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন যে একটি গেমিং মোবাইল কেনার জন্য আপনাকে কোন কোন বিষয়গুলিতে গুরুত্ব দিয়ে বুঝতে হবে।

গেমিং ফোন চেনার উপায়

    তবে হ্যাঁ স্নাপড্রাগণ এর প্রযুক্তিগত দিক মিডিয়াটেক প্রসেসর এর থেকে অনেক ভাল। এমনকি আর্কিটেকচার এর দিক থেকে মিডিয়াটেক কখনো কখনো স্নাপড্রাগণ কে পিছনে ফেলে দিয়েছে। সুতরাং মোবাইল সিলেক্ট করার পর তাকে ভালভাবে দেখতে হবে যে তার প্রসেসর এবং বেঞ্চমার্ক কিভাবে গঠন করা হয়েছে।

গেমিং ফোন চেনার উপায়

    আশা করি আমার এই বিস্তারিত মোবাইল গেমিং সম্পর্কে আলোচনা আপনার কিছু হলেও বুঝতে সাহায্য করেছে। যদি সত্যিই আপনার কিছু সামান্য উপকার লেগে থাকে তবে অবশ্যই নিচে কমেন্ট করে জানাবেন। আশাকরি আর গেমিং মোবাইল এর জন্য দ্বিতীয়বার আপনাকে আর ভাবতে হবেনা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.